হযরত শাহ্ মখদুম রুপোশ (রঃ)- এর স্মৃতি বিজড়িত পূণ্যভূমিতে বৈচিত্র্যময় বৃক্ষরাজিশোভিত সুশীতল ছায়াসুনিবিড় পরিবেশে অবস্থিত রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ রাজশাহী জেলার মেয়েদের জন্য একমাত্র সরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঔপনিবেশিক আমল থেকেই রাজশাহী শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে স্বতন্ত্র কোনো মহিলা কলেজ ছিল না। তাই নারীদের আত্মপ্রতিষ্ঠা ও নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য রাজশাহী-র কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী ব্যক্তির উদ্যোগে ও জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় ১৯৬২ সালের ২৪ এপ্রিল নগরীর কাদিরগঞ্জ মহল্লার অন্তর্গত তারিনী বাবুর বাগান নামে পরিচিত বৃক্ষরাজি শোভিত প্রায় দশ একরের একটি মনোরম ভূখন্ডে রাজশাহী মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন বদলি সনদের মাধ্যমে ভর্তিকৃত পঁচিশ জন ছাত্রী নিয়ে এই কলেজের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম থেকেই শিক্ষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ক্রীড়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছাত্রীদের অসাধারণ সাফল্যের ফলে এই কলেজের প্রতি ছাত্রী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ষাটের দশকের মাঝামাঝি তৎকালীন সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মহিলা কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে ১৯৬৮ সালের ২৫ এপ্রিল সেই পরিকল্পনার আওতায় এই কলেজটির সরকারিকরণ প্রক্রিয়া স¤পন্ন হয়। কলেজটিতে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসালামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স, ইতিহাস, ভূগোল ও পরিবেশ, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে অনার্স কোর্স; বিএ, বিএসএস, বিএসসি ডিগ্রি (পাস) এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা চালু রয়েছে।

কলেজে সর্বমোট ১৯টি বিভাগ রয়েছে। এখানে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও কর্মঠ শিক্ষকমন্ডলী রয়েছেন যাঁদের মধ্যে কয়েকজন এম.ফিল. ও পিএইচ.ডি. ডিগ্রিধারী। এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষাবিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত ছিলেন ও বর্তমানেও আছেন। এদের মধ্যে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন অন্যতম।

ভৌত অবকাঠামো: কলেজে তিনতলা বিশিষ্ট একটি প্রশাসন ভবন রয়েছে। ঐ একই আকৃতির আরও দুটি তিনতলা ভবনে একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে স¤পন্ন হচ্ছে। ছাত্রীদের জন্য কমনরুম, ক্রীড়াকক্ষ, বিএনসিসি, রোভার ডেন, নামাজঘর, মিলনায়তন ও ক্যান্টিন রয়েছে। তাছাড়া ইন্টারনেট সুবিধা সম্বলিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি রয়েছে যাতে বই ও জার্নালের পর্যাপ্ত সংগ্রহ আছে। দূর হতে আগত মেধাবী ছাত্রীদের আবাসনের জন্য রয়েছে দুটি ভবনবিশিষ্ট একটি ছাত্রী হোস্টেল। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রতিশ্রæত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি ছয় তলা হোস্টেল নির্মাণাধীন রয়েছে।

কলেজ সংক্রান্ত তথ্যাবলি

প্রতিষ্ঠাকাল : ২৪/০৪/১৯৬২ খ্রি:
সরকারিকরণ  :  ২৫/০৪/১৯৬৮ খ্রি:
বর্তমান অধ্যক্ষ : প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা

বর্তমান উপাধ্যক্ষ  :  প্রফেসর ড. নাজনীন সুলতানা

অধ্যক্ষ : ১টি
উপাধ্যক্ষ : ১টি
অধ্যাপক : ২টি (এছাড়া সংযুক্ত ০১ জন এবং ইনসিটু ০৩ জন অধ্যাপক কর্মরত আছেন)
সহযোগী অধ্যাপক : ১৩টি
সহকারী অধ্যাপক : ১৭টি
প্রভাষক : ৩৪টি
প্রদর্শক : ০২টি
গ্রন্থাগারিক : ০১টি
সহকারী গ্রন্থাগারিক : ০১টি
শরীরচর্চা শিক্ষক : ০১টি

শিক্ষকদের উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণা সংক্রান্ত তথ্যাবলি: বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. জুবাইদাআয়েশা সিদ্দীকা মহোদয় সমাজকল্যাণ এবং উপাধ্যক্ষ ড. নাজনীন সুলতানা সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন: বাংলা বিভাগে প্রফেসর ড. মোহা: আকতারুজ্জামান শেখ, প্রণিবিদ্যা বিভাগে ড. মোছা: মাকসুদা খানম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ড. মোঃ শওকত আলী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ড. মোঃ সাইফুল ইসলাম। এছাড়াও গণিত বিভাগের শিক্ষক জনাব মোঃ ছাইফুল ইসলাম খন্ডকালীন এম.ফিল. ডিগ্রির জন্য গবেষণারত রয়েছেন।

বিভাগসমূহ: বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল ও পরিবেশ, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, পরিসংখ্যান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপনন।

যে সকল পর্যায়ে পাঠদান করা হয়:
উচ্চ মাধ্যমিক: মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা
স্নাতক (পাস): কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও বি.এসসি.
স্নাতক (সম্মান): বাংলা : ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ইংরেজি: ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
অর্থনীতি : ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু : ২০০৫-০৬
রাষ্ট্রবিজ্ঞান: ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
দর্শন: ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ইতিহাস: ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু
ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা : ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ হতে শুরু

স্নাতক পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, প্রাণিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান: ২০১৫-২০১৬ শিক্ষা বর্ষ হতে এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ হতে বিএসসি (সম্মান) পাঠদান শুরু হয়েছে। মাস্টার্স বিষয়সমূহ: বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি।

প্রশাসনিক ভবন: এটি ৩১-০৮-১৯৯৮ সালে নির্মিত হয়। কলেজ গেট থেকে প্রবেশ করে ডান দিকের তিনতলা ভবনটি প্রশাসনিক ভবন। এর নীচতলায় পরীক্ষা কন্ট্রোল রুম ও শিক্ষক মিলনায়তন রয়েছে। ২য় তলাতে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ মহোদয়ের কক্ষ এবং পশ্চিম দিকে কলেজের অফিস রয়েছে। ৩য় তলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণী কক্ষ এবং ৩১৭ নং কক্ষটি আইসিটি বিভাগের কম্পিউটার   ল্যাব।

একাডেমিক ভবন: কলেজ গেট থেকে সোজা পশ্চিমে গিয়ে বাম দিকে একাডেমিক ভবন অবস্থিত। এর উত্তর ব্লকের নীচতলায় অর্থনীতি, ইংরেজি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ; পশ্চিম দিকে ১০৫ নং কক্ষটি শ্রেণিকক্ষ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগ, ১০৬ নং কক্ষটি আইসিটি সেল, ১০৮ নং কক্ষটি শ্রেণিকক্ষ হিসাবে রয়েছে। ১০৯ নং কক্ষটি বাংলা বিভাগ ও ১১০ নং কক্ষটি বাংলা বিভাগের শ্রেণিকক্ষ, দ্বিতীয় তলায় ২০১ নং কক্ষটি দর্শন বিভাগ, ২০২ নং কক্ষটি প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগ, ২০৩ নং কক্ষটি প্রাণিবিজ্ঞান ল্যাব, ২০৪ নং কক্ষটি ইংরেজি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ, ২০৫ নং কক্ষটি শ্রেণিকক্ষ, ২০৬ নং কক্ষটি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ২০৭ নং কক্ষটি পরিসংখ্যান বিভাগ, ২০৮ নং কক্ষটি গণিত বিভাগ, ২০৯ নং কক্ষটি আইসিটি বিভাগ এবং সর্ব পশ্চিমে একটি লাইব্রেরি রয়েছে। তৃতীয় তলায় ৩০১, ৩০২, ৩০৩, ৩০৪, ৩০৫, ৩০৬, ৩০৭ নং কক্ষগুলো শ্রেণিকক্ষ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ৩০৮ নং কক্ষটি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ৩০৯ নং শ্রেণিকক্ষ ও ৩১০ নং কক্ষটি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব এবং ৩১১ নং কক্ষটি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ল্যাব হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ১১১ নং ও ১১২ নং কক্ষদ্বয় শ্রেণিকক্ষ। ২য় তলায় ২১২ নং কক্ষে ইতিহাস বিভাগ, ২১৩ নং কক্ষটি ইতিহাস বিভাগের শ্রেণিকক্ষ হিসেবে এবং পশ্চিম দিকে ২১৪ নং কক্ষটি শ্রেণিকক্ষের পাশাপাশি অডিটোরিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ৩য় তলায় ৩১২ নং কক্ষে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ৩১৩ নং কক্ষটি ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শ্রেণিকক্ষ, ৩১৪ নং কক্ষ ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এবং ৩১৫ নং ও ৩১৬ নং কক্ষদ্বয় শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সহশিক্ষা কার্যক্রম ভবন: এই ভবনটি কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নির্মিত হয়। ভবনটি কলেজের বাগানের দক্ষিণে এবং ক্যান্টিন সংলগ্ন। ভবনটিতে বিএনসিসি, রোভার ডেন, রেঞ্জার ইউনিট, ক্রীড়া কক্ষ, সাংস্কৃতিক ক্লাব এবং ছাত্রী কমনরুম রয়েছে।

ছাত্রীনিবাস: রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে আবাসিক ছাত্রীদের জন্য দুটি ভবনবিশিষ্ট একটি ছাত্রীনিবাস রয়েছে। একটি তিনতলা এবং অন্যটি চারতলাবিশিষ্ট ভবনে সর্বমোট ৩৫০ জন ছাত্রী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি আর্থিক বছরে এককালীন ফি দিয়ে ছাত্রীনিবাসে ছাত্রী ভর্তি করা হয়। এখানে বিনোদনের জন্য টেলিভিশন দেখার এবং ব্যাডমিন্টন, ক্যারাম, লুডু, দাবা ইত্যাদি খেলার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্রীনিবাসের অভ্যন্তরে যথাযথ পড়াশুনা ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে ছাত্রীদেরকে এখানকার সকল আইন-কানুন ও নিয়মশৃঙ্খলা কঠোরভাবে মেনে চলতে হয়। হোস্টেল সুপার ও সহকারী হোস্টেল সুপার এর সার্বিক দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ মহোদয়ের নেতৃত্বে অভিজ্ঞ শিক্ষকমÐলীসহ হোস্টেল উপদেষ্টা কমিটি আছে। তাঁরা ছাত্রীনিবাস পরিচালনার জন্য নিয়মিত মিটিং এর মাধ্যমে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন।

লাইব্রেরি: একাডেমিক ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে ২য় তলায় (তিন কক্ষবিশিষ্ট) নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশ সম্বলিত একটি লাইব্রেরি অবস্থিত। এর পুস্তক সংখ্যা ১৬,০০০ (প্রায়), ম্যাগাজিন ৪৭০টি, দৈনিক খবরা-খবর জানার জন্য রয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্র। একসাথে প্রায় ১০০ জন ছাত্রী লাইব্রেরিতে বসে পড়াশুনা করতে পারে। এছাড়া লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধার্থে ওয়াইফাই সংযোগ বিশিষ্ট দুইটি কম্পিউটার আছে।

শহীদ মিনার: এটি ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয়। কলেজ গেট থেকে সোজা পশ্চিম দিকে পুকুরের ধারে মনোরম পরিবেশে এই শহীদ মিনার অবস্থিত। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারে পু®পার্ঘ্য অর্পণসহ নানা অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। শহীদ মিনারটি তিন স্তরবিশিষ্ট, মাঝের স্তরের সাথে গোলাকার সূর্যের প্রতীক বিদ্যমান।

পুকুর: কলেজে দুটি পুকুর আছে। একটি প্রশাসন ভবনের পশ্চিমে, আয়তন প্রায় এক বিঘা। দুই পার্শ্বে দুটি বাঁধানো ঘাট সহ শিক্ষার্থীদের বসার জন্য শান বাঁধানো বেঞ্চ আছে। এছাড়াও অন্য পুকুরটি একেবারে পশ্চিমে শহীদ মিনারের পেছনে প্রাচীর ঘেরা অবস্থায় আছে। এর আয়তন প্রায় দুই বিঘা।

কলেজের রেঞ্জার ইউনিট: সবুজ ছায়াঘেরা সুন্দর পরিবেশে অত্র কলেজের ছাত্রীদের শিক্ষাগ্রহণের পাশাপাশি দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাস, মমত্ববোধ বৃদ্ধি প্রভৃতি কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সচেতন ও কর্তব্যপরায়ণ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কলেজে একটি রেঞ্জার ইউনিট চালু আছে। স্বাধীনতা উত্তর ১৯৭৪ সালে অত্র কলেজে রেঞ্জার ইউনিট চালুর পর হতে অদ্যাবধি কলেজের শিক্ষার্থীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেছে। ২০০৮ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত ফ্রেন্ডশীপ ক্যারাভান এবং ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত সাংগাম ওয়ার্ল্ড সেন্টার প্রোগ্রাম, আর্টস ফর চেঞ্জ ইভেন্ট কর্মকান্ডে অত্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী আফছানা আক্তার এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী আফসানা খাতুন যোগদানের সুযোগ পেয়ে অত্র কলেজের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। দেশের অভ্যন্তরে বৃক্ষরোপণ, টিকাদান কর্মসূচি, দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র প্রদান, ঔষধ বিতরণ এবং শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক কর্মকাÐে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ ইউনিট জাতীয়ভাবে শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অর্জন করেছে। সাধারণ ছাত্রীদের দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তুলতে কলেজের রেঞ্জার ইউনিট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

রোভার স্কাউট ইউনিট: রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে পড়াশুনার পাশাপাশি স্কাউটিং চর্চা করা হয়। স্কাউটিং এ কলেজে শুরু হয় ২০১৩ সালে। এরই প্রেক্ষিতে এ কলেজে গার্ল-ইন-রোভার ইউনিট চালু আছে। রোভাররা বিভিন্ন কোর্স এবং ক্যা¤প করে এ কলেজের সুনাম এবং গৌরব বৃদ্ধি করেছে। সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় রোভারদের কৃতিত্ব অনন্য। ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে বৃক্ষরোপন, টিকাদান কর্মসূচী, দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র প্রদান, ঔষধ বিতরণ এবং সেবামূলক কাজে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। ছাত্রীদের দায়িত্ববান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে কলেজের গার্ল-ইন-রোভার ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে।

বিএনসিসি ইউনিট: রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে বিএনসিসি এর একটি ইউনিট আছে। যেটি মহাস্থান রেজিমেন্টের ১ মহাস্থান ব্যাটালিয়ানের ডি কো¤পানীর ২নং প্লাটুন। প্রতিটি প্লাটুন ১জন প্লাটুন কমান্ডার, ১জন সিইউও, ১জন সার্জেন্ট, ৩জন ক্যাডেট কর্পোরাল, ৩জন ল্যান্স কর্পোরাল ও ২৪ জন ক্যাডেটের সমন্বয়ে গঠিত হয়। ক্যাডেটগণ প্রতিবছর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐসহ, সামাজিক, ঐচ্ছিক এবং বিএনসিসি কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন ক্যা¤প ও প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিক্ষেত্রে সাফল্যের চিহ্ন আঁকছে ও প্রশংসিত হচ্ছে। এছাড়াও মেধাবী ক্যাডেটদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি ও বিদেশ সফরের সুযোগ করে দেয় বিএনসিসি। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনসিসি এর কার্যক্রম বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতি মানবতার সেবায় রক্তদান, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিরাপত্তা বাহিনীকে সহায়তা প্রদান, বৃক্ষরোপণ অভিযান প্রভৃতি কর্মকান্ডের মাধ্যমে বিএনসিসির ক্যাডেটবৃন্দ প্রতিনিয়ত নিজেদের নিয়োজিত রাখছে।

খেলাধূলা ও শরীরচর্চা: ছাত্রীদের খেলাধুলা ও শরীরচর্চার জন্যে কলেজের একাডেমিক ভবনের পেছনে দক্ষিণ দিকে একটি বিস্তৃত মাঠ রয়েছে। এখানে ছাত্রীরা সারা বছর শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করে থাকে। এছাড়াও এ মাঠে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে, জাতীয় পর্যায়ে এই কলেজের ছাত্রীরা গৌরবোজ্জ্বল অবদান রেখে চলেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমস্ এ দ্বাদশ শ্রেণির দুজন শিক্ষার্থী ক্যারাতে এবং বক্সিং প্রতিযোগিতায় যাথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত আন্তঃ কলেজ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২১ এ জাতীয় পর্যায়ে এই কলেজের একজন শিক্ষার্থী চাকতি নিক্ষেপ প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জন করে।

সংস্কৃতি চর্চা: এই কলেজে ছাত্রীরা নিয়মিত সহ-শিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গান, নাচ, অভিনয় ইত্যাদি চর্চা করে থাকে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে, নববর্ষে এবং বার্ষিক সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। ২০১৪ সালে এই কলেজের একটি সঙ্গীত দল সত্যেন সেন গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান লাভ করে এবং জাতীয় পর্যায়ে দলটি তৃতীয় স্থান অর্জন করে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে।

আবৃত্তি ও বিতর্ক ক্লাব এবং ল্যাংগুয়েজ ক্লাব: এ কলেজে আবৃত্তি ও বিতর্ক ক্লাব এবং ল্যাংগুয়েজ ক্লাব নামে দুটি সংগঠন আছে। যার মাধ্যমে অত্র কলেজের ছাত্রীরা জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার অর্জন করার মাধ্যমে কলেজকে একটি সম্মানজনক স্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
বাঁধন: এ কলেজে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর সংগঠন বাঁধন রয়েছে। এর মাধ্যমে কলেজে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী পালন করা হয়।

ক্যান্টিন: কলেজের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একতলাবিশিষ্ট একটি ক্যান্টিন রয়েছে। কলেজের একাডেমিক ভবনের পূর্বদিকে বাগানের পাশ দিয়ে ক্যান্টিনে যাওয়া যায়।

ছাত্রী কমন রুম: সহশিক্ষা কার্যক্রম ভবনে একটি ছাত্রী কমন রুম অবস্থিত। সেখানে ক্যারাম, দাবা, টেবিল টেনিস, বাগাডুলি, লুডু খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা: ডা. শাহীন সুলতানা বর্তমানে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে সপ্তাহে একদিন প্রতি সোমবার ছাত্রীদের বিকাল ৫.০০ টা হতে ৭.০০ টা পর্যন্ত হোস্টেল টিভি রুমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয় দেখভাল করার জন্য শিক্ষকবৃন্দের একটি কমিটি রয়েছে।

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, কলেজ শাখা: অত্র কলেজে বিশ ¦ব্যাপী পরিচিত রেডক্রস/রেডক্রিসেন্ট-এর একটি ইউনিট আছে। আন্তর্জাতিক এ সংগঠনটির কার্যক্রম অর্থাৎ মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বেচ্ছামূলক সেবা, একতা প্রভৃতি বিষয়ে মেয়েদেরকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে সংগঠিত করে কলেজ শাখার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এসব কর্মকাÐে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মেয়েদের চিন্তা চেতনার উৎকর্ষ বৃদ্ধি পায় এবং বাস্তবতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনে রেডক্রিসেন্ট আন্দোলন বিশেষ ভূমিকা রাখে। অত্র কলেজের মেয়েরা নানা প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতার মাঝে এ আন্দোলন অর্থাৎ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

পুরস্কার: একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার, দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল ও সম্মান শ্রেণির ফাইনাল পরিক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পুরস্কৃত করা হয়। তাছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সংশ্লিষ্ট বিষেয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও খেলাধুলা প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান করা হয়।

ক্যারিয়ার ক্লাব: কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গঠন সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি কমিটি রয়েছে।

দরিদ্র শিক্ষার্থী কল্যাণ কমিটি: কলেজের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন নির্বিঘ্ন করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির সদস্যবৃন্দ যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এছাড়া কলেজের সার্বিক কার্যক্রম সুসম্পন্ন করার জন্য অনেকগুলি কমিটি সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যেমন-একাডেমিক পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি, প্ল্যানিং (ভৌত অবকাঠমো) কমিটি, নৈতিকতা ও শুদ্ধাচার কমিটি এবং বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি, ইনোভেশন কমিটি ইত্যাদি।

এক নজরে কলেজের সাধারণ তথ্যাবলি:

০১. কলেজের নাম : রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ, রাজশাহী

২. Web Address : www.rgwcollege.edu.bd

৩. E-mail : rgwcollege@yahoo.com & rgwcollegerajshahi@gmail.com

০৪. প্রতিষ্ঠাকাল : ২৪-০৪-১৯৬২ খ্রি.
০৫. সরকারিকরণ : ২৫-০৪-১৯৬৮ খ্রি.
০৬. কলেজ কোড : ২৫০৭ (স্নাতক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)
: ৩২০৭ (স্নাতকোত্তর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়)
: ১০৫০ (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী)
: ০১৩৯ (মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর, ঢাকা)
: ১২৬৪৮৭ (ইআইআইএন, ব্যানবেইস, ঢাকা)
: ১০২ (উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র)
০৭. অবস্থান : কাদিরগঞ্জ, রাজশাহী
০৮. মৌজা : ষষ্ঠিতলা। জমির পরিমাণ : ১০ একর
০৯. ওয়ার্ড নং : ১৩
১০. থানা : বোয়ালিয়া
১১. পোষ্ট কোড : জিপিও-৬০০০
১২. বিভাগের সংখ্যা : ২১টি (গ্রন্থগার ও শরীরচর্চা বিভাগসহ)
১৩. অনার্স পাঠদানকারী বিভাগের সংখ্যা : ১৪টি
১৪. মাস্টার্স পাঠদানকারী বিভাগের সংখ্যা : ৫টি
১৫. কলেজের ছাত্রী সংখ্যা : ৮,০০০ (আট হাজার) প্রায়
১৬. শিক্ষকের সৃষ্ট পদ সংখ্যা (অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ) : ৬৮টি প্রদর্শক: ০৬, শরীরচর্চা: ০১, সহ: গ্রন্থাগারিক : ০১, গ্রন্থাগারিক : ০১
১৭. কর্মরত কর্মকর্তার সংখ্যা : ৬৮: প্রদর্শক : ০২, শরীরচর্চা: ০১, সহকারী গ্রন্থাগারিক : ০১, গ্রন্থাগারিক : ০১
১৮. কর্মচারীদের সৃষ্ট পদ সংখ্যা : তৃতীয় শ্রেণি: ১১, ৪র্থ শ্রেণি : ২২
১৯. কর্মরত কর্মচারীদের সংখ্যা : তৃতীয় শ্রেণি: ০২, ৪র্থ শ্রেণি: ১৫,
মাস্টাররোল কর্মচারী : ৩৯ (হোস্টেল বাদে)
২০. একাডেমিক ভবন : ০২
২১. সহশিক্ষা কার্যক্রম ভবন : ০১
২২. ছাত্রীনিবাস : ০২ (একটি পুরাতন যার ভবন সংখ্যা ২টি আসন সংখ্যা- ৩৬০টি ও একটি ২৫০ আসনবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস নির্মানাধীণ রয়েছে।)
২৩. কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি : ০১
২৪. বিএনসিসি কার্যালয় : ০১
২৫. ছাত্রী কমনরুম : ০১
২৬. শহীদ মিনার : ০১
২৭. শিক্ষক মিলনায়তন : ০১
২৮. স্টোর রুম : ০১
২৯. বিভাগীয় সেমিনার : ১৪
৩০. রেঞ্জার ডেন : ০১
৩১. অডিটোরিয়াম : ০১
৩২. খেলার মাঠ : ০১
৩৩. পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ : ০১
৩৪. ফুলের বাগান : ০৩টি
৩৫. ক্যান্টিন : ০১টি
৩৬. রোভার স্কাউট কার্যালয় : ০১টি
৩৭. ছাত্রীনিবাসের অফিস-কাম ডরমেটরি : ০১টি
আসন সংখ্যা
উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি
বিজ্ঞান : ৪৫০
মানবিক : ৪৫০
ব্যবসায় শিক্ষা : ৩০০
কলেজ প্রশাসন
অধ্যক্ষ : প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা
উপাধ্যক্ষ : প্রফেসর ড. নাজনীন সুলতানা
একাডেমিক কাউন্সিল
সভাপতি : প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দীকা, অধ্যক্ষ
সদস্য-সচিব : প্রফেসর ড. নাজনীন সুলতানা, উপাধ্যক্ষ
সদস্য : সকল বিভাগীয় প্রধান ও সম্পাদক, শিক্ষক পরিষদ এবং ছাত্রীনিবাসের তত্ত¡াবধায়ক
ছাত্রীনিবাস
তত্ত্বাবধায়ক: জনাব জান্নাতুল ফেরদৌস, সহকারী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
সহকারী তত্ত্বাবধায়ক:  জনাব মোঃ মাহবুব হাসান, সহকারী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ